ভূমি-খতিয়ান (পার্বত্য চট্টগ্রাম) অধ্যাদেশ, ১৯৮৪

( Ordinance NO. 2 Of 1985 )

[ ১৬ জানুয়ারী, ১৯৮৫ ]

পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার ভূমি-খতিয়ান প্রস্তুতের বিধান করার জন্য অধ্যাদেশ৷

যেহেতু পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার ভূমি-খতিয়ান প্রস্তুতের ও তত্সংক্রান্ত বিষয়াদির ব্যাপারে বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;

সেহেতু, এক্ষণে, রাষ্ট্রপতি ১৯৮২ সনের ২৪শে মার্চ তারিখের ফরমান এবং এই ক্ষেত্রে তাঁহার অন্যান্য সকল ক্ষমতাবলে িনুরূপ অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারী করিলেন:-

সংক্ষিপ্ত শিরোনামা ও প্রয়োগ১৷ (১) এই অধ্যাদেশ ১৯৮৪ সনের ভূমি-খতিয়ান (পার্বত্য চট্টগ্রাম) অধ্যাদেশ নামে অভিহিত হইবে৷

(২) ইহা সমগ্র পাবর্ত্য চট্টগ্রাম এলাকায় প্রযোজ্য হইবে৷

সংজ্ঞা২৷ বিষয় বা প্রসংগের পরিপন্থী কোন কিছু না থাকিলে, এই অধ্যাদেশে,-

(ক) “পার্বত্য চট্টগ্রাম” বলিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম, বান্দরবন ও খাগড়াছড়ি জেলাসমূহের অন্তর্গত সকল এলাকাকে বুঝাইবে;

(খ) “ভূমি” বলিতে পানি বা জলাশয় অন্তর্ভুক্ত হইবে;

(গ) “রাজস্ব অফিসার” বলিতে সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার অথবা এই অধ্যাদেশ বা তদধীনে প্রণীত বিধি অনুযায়ী রাজস্ব অফিসারের সকল বা যে কোন দায়িত্ব পালনের জন্য সরকার কর্তৃক নিয়োজিত অন্য কোন অফিসারকে বুঝাইবে৷

ভূমি-খতিয়ান প্রস্তুত৩৷ সরকার, যথোচিত মনে করিলে, এই অধ্যাদেশের বিধানাবলী মোতাবেক রাজস্ব অফিসার দ্বারা পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা বা উহার যে কোন অংশের জরীপ এবং ভূমি-খতিয়ান প্রস্তুত বা সংশোধন করার নির্েদশ দিয়া সরকারী গেজেটে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আদেশ জারী করিতে পারিবেন৷

ভূমি-খতিয়ানে যে সকল বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হইবে৪৷ (১) ৩ ধারার অধীন কোন আদেশ জারী করা হইলে, রাজস্ব অফিসার প্রতিটি মৌজাকে জরীপের একটি একক ধরিয়া উহার অন্তর্গত রাস্তা-ঘাট, নদী-নালা, বাড়ী-ঘর, মাঠ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করিয়া বড় আকারের

একটি ম্যাপ প্রস্তুত করিবেন এবং প্রস্তুতব্য বা সংশোধনীয় ভূমি-খতিয়ানে সরকার যে সকল বিবরণ লিপিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন সেই সকল বিবরণ লিপিবদ্ধ করিবেন৷

(২) যে ক্ষেত্রে কোন মৌজার পূর্ব-নির্ধারিত সীমানাভুক্ত কোন এলাকা জরীপ ও খতিয়ানের একক হিসাবে অনুপযুক্ত, সেই ক্ষেত্রে রাজস্ব অফিসার যতদূর সম্ভব স্থানীয় জনগণের মতামত এবং জেলা প্রশাসকের অভিমত যাচাই করিবার পর জরিপের একক হিসাবে গ্রহণের উদ্দেশ্য এলাকা নির্ধারণের জন্য সরকারের নিকট, ভূমি রেকর্ড ও জরিপের মহা-পরিচালকের মাধ্যমে, প্রস্তাব পেশ করিবেন এবং সরকার যদি এককটি অনুমোদন করেন তাহা হইলে উহাকে ম্যাপ ও ভূমি-খতিয়ান প্রস্তুত ও সংশোধনের জন্য একটি মৌজা হিসাবে ঘোষণা ও গ্রহণ করা হইবে৷

খসড়া ভূমি-খতিয়ান প্রকাশন৫৷ ৪ ধারা অনুযায়ী খসড়া ভূমি-খতিয়ান প্রস্তুত বা সংশোধিত হওয়ার পর, রাজস্ব অফিসার অন্যুন তিরিশ দিন পর্যন্ত জনসাধারণের পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে খসড়াটি প্রকাশ করিবেন এবং এইরূপ প্রকাশের মেয়াদের মধ্যে উক্ত খতিয়ানে লিখিত অথবা উহা হইতে বাদ পড়িয়া যাওয়া কোন কিছু সম্পর্েক কোন আপত্তি দায়ের করা হইলে, রাজস্ব অফিসার তাহা গ্রহণ করিবেন এবং বিবেচনা করিয়া দেখিবেন৷

আপীল৬৷ (১) ৫ ধারার অধীন দায়েরকৃত আপত্তির উপর রাজস্ব অফিসারের কোন আদেশের দ্বারা সংক্ষুব্ধ কোন ব্যক্তি আদেশের তারিখ হইতে তিরিশ দিনের মধ্যে সেটেলমেন্ট অফিসারের নিকট আপীল দায়ের করিতে পারিবেন৷

(২) এইরূপ প্রত্যেকটি আপীল লিখিত হইতে হইবে এবং উহাতে আপীলের কারণ সমূহের বর্ণনা থাকিতে হইবে এবং যে আদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করা হইবে উহার একটি প্রত্যায়িত নকল উক্ত আপীলের সহিত সংযোজন করিতে হইবে৷

(৩) সেটেলমেন্ট অফিসার স্বয়ং এইরূপ আপীল নিষ্পন্ন করিতে পারিবেন অথবা উহা নিষ্পত্তির জন্য তাঁহার অধস্তন এইরূপ কোন সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারের নিকট হস্তান্তর করিতে পারিবেন যিনি নিজে উক্ত ভূমি-খতিয়ান প্রস্তুত বা সংশোধন করেন নাই৷

আপত্তি ও আপীল নিষ্পত্তির পদ্ধতি৭৷ (১) যে ব্যক্তি ৫ ধারার অধীন আপত্তি অথবা ৬ ধারার অধীন আপীল শুনিবেন, তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে দেওয়ানী বিচারের পরিচালনা কার্েয নিয়োজিত কোন অফিসার কর্তৃক প্রয়োগযোগ্য সকল ক্ষমতা এবং ১৮৭৫ সনের সার্েভ এ্যাক্ট (১৮৭৫ সালের ৫ নং বেঙ্গল এ্যাক্ট) এর অধীন কালেক্টরের সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী হইবেন৷

(২) আপত্তি বা আপীল সংক্ষেপে নিষ্পন্ন করা হইবে এবং নথিতে সাক্ষ্য প্রমাণের সার-সংক্ষেপ ও রায়ের যৌক্তিকতার সারাংশ লিপিবদ্ধ করা হইবে৷

(৩) সংশ্লিষ্ট পক্ষগণকে যুক্তিসংগত শুনানীর সুযোগ প্রদান না করিয়া কোন আপত্তি বা আপীল নিষ্পন্ন করা যাইবে না৷

ভূমি-খতিয়ানের চূড়ান্ত প্রকাশনা৮৷ (১) দায়েরকৃত যাবতীয় আপত্তি ও আপীল নিষ্পত্তির পর, রাজস্ব অফিসার চূড়ান্ত ভূমি-খতিয়ান প্রস্তুত করিবেন এবং উহা মুদ্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন৷

(২) ভূমি-খতিয়ান মুদ্রণের পর রাজস্ব অফিসার উহা অন্যুন তিরিশ দিনের জন্য চূড়ান্তভাবে প্রকাশের ব্যবস্থা করিবেন এবং এইরূপ প্রকাশন খতিয়ানটি যে এই অধ্যাদেশের অধীনে যথাযথভাবে প্রস্তুত বা সংশোধিত হইয়াছে তাহার চূড়ান্ত প্রমাণ হিসাবে গণ্য হইবে৷

চূড়ান্ত প্রকাশনের প্রত্যায়ন পত্র৯৷ ভূমি-খতিয়ান চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হইবার পর, ভূমি রেকর্ড ও জরীপের মহা-পরিচালক কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রাজস্ব অফিসার উক্তরূপ চূড়ান্ত প্রকাশনার বিষয় ও উহার তারিখ উল্লেখ করিয়া একটি প্রত্যায়ন প্রস্তুত করিবেন এবং উহাতে তাঁহার নাম ও সরকারী পদবী উল্লেখপূর্বক তারিখসহ স্বাক্ষর দান করিবেন৷

ভূমি-খতিয়ানের শুদ্ধতা সম্পর্েক অনুমান১০৷ এই অধ্যাদেশের অধীন প্রস্তুতকৃত বা সংশোধিত ভূমি-খতিয়ানে লিপিবদ্ধ প্রত্যেক তথ্য তত্সম্পর্িকত বিষয়ের প্রমাণ হিসাবে গণ্য হইবে এবং তাহা সাক্ষ্য প্রমাণ দ্বারা অশুদ্ধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত শুদ্ধ বলিয়া বিবেচিত হইবে৷

মোকদ্দমা প্রত্যাহার ও বদলী সম্পর্েক সেটেলমেন্ট অফিসারের ক্ষমতা১১৷ সেটেলমেন্ট অফিসার, কোন দরখাস্তের প্রেক্ষিতে বা স্বীয় উদ্যোগে, তাঁহার অধস্তন কোন রাজস্ব অফিসারের নিকট হইতে এই অধ্যাদেশের অধীনে দায়েরকৃত যে কোন মোকদ্দমা প্রত্যাহার করিয়া নিজেই নিষ্পত্তি করিতে পারিবেন অথবা নিষ্পত্তির জন্য তাঁহার অধস্তন অন্য কোন রাজস্ব অফিসারের নিকট বদলী করিতে পারিবেন৷

প্রতারণামূলক লিপি-ভূক্তির সংশোধন১২৷ (১) সেটেলমেন্ট অফিসার, কোন দরখাস্তের প্রেক্ষিতে বা স্বীয় উদ্যোগে, সংশ্লিষ্ট রেকর্ডসমূহ পর্যালোচনা এবং তাঁহার বিবেচনায় প্রয়োজনীয় তদন্তের পর যদি এই মর্েম সন্তুষ্ট হন যে কোন ভূমি-খতিয়ানে প্রতারণার মাধ্যমে কোন তথ্য লিপিবদ্ধ করা হইয়াছে, তাহা হইলে তিনি ভূমি-খতিয়ানটির চূড়ান্ত প্রকাশনের পূর্েব উহার সংশোধন করিবার জন্য নির্েদশ দান করিতে পারিবেন৷

(২) সেটেলমেন্ট অফিসার সংশ্লিষ্ট পক্ষগণকে শুনানীর জন্য যুক্তিসংগত সুযোগ প্রদান না করিয়া এই ধারার অধীন কোন আদেশ দান করিবেন না৷

(৩) এই ধারার অধীন প্রদত্ত আদেশ চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হইবে৷

সেটেলমেন্ট অফিসারের বিশেষ ক্ষমতা১৩৷ চূড়ান্ত ভূমি-খতিয়ান প্রকাশনের পূর্েব যে কোন সময়ে সেটেলমেন্ট অফিসার কোন এলাকা সম্পর্েক এই অধ্যাদেশের অধীনে গৃহীত কার্যধারার যে কোন অংশ বাতিলের নির্েদশ দান করিতে পারিবেন এবং কোন পর্যায় হইতে উক্ত কার্যধারা পুনরায় আরম্ভ করা হইবে তাহাও নির্িদষ্ট করিয়া দিতে পারিবেন৷

এই অধ্যাদেশের অধীন মহা-পরিচালকের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা১৪৷ সরকারের সাধারণ তত্বাবধান সাপেক্ষে, এই অধ্যাদেশের অধীনে গৃহীত যাবতীয় কার্য ভূমি রেকর্ড ও জরীপের মহা-পরিচালকের তত্বাবধানে ও নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হইবে এবং তিনি এই অধ্যাদেশের অধীনে রাজস্ব অফিসারের যাবতীয় ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করিতে পারিবেন৷

জেলা প্রশাসকের নিকট ম্যাপ ও ভূমি-খতিয়ান হস্তান্তর১৫৷ (১) এই অধ্যাদেশের অধীনে কোন মৌজার ভূমি-খতিয়ান চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত বা সংশোধনের পর, রাজস্ব অফিসার এতদসংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্রসহ সকল মুদ্রিত ম্যাপ ও ভূমি-খতিয়ান সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের নিকট হস্তান্তর করিবেন৷(২) জেলা প্রশাসক মুদ্রিত ম্যাপ ও ভূমি-খতিয়ান সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করিবেন৷

আদালতের এখতিয়ারের প্রতিবন্ধক১৬৷ ভূমি-খতিয়ান প্রস্তুত বা সংশোধনের নির্েদশ সংক্রান্ত কোন আদেশ বা ভূমি-খতিয়ান প্রস্তুত বা সংশোধন সম্পর্িকত কোন বিষয় সম্পর্েক কোন আদালতে মোকদ্দমা দায়ের বা দরখাস্ত পেশ করা চলিবে না৷

বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা১৭৷ সরকার এই অধ্যাদেশের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকারী গেজেটে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবেন৷

পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৮৭৫ সনের ৫ নং বেঙ্গল এ্যাক্টের প্রয়োগ১৮৷ ১৮৭৫ সনের সার্েভ এ্যাক্ট (১৮৭৫ সনের ৫ নং বেঙ্গল এ্যাক্ট) এবং তদধীনে প্রণীত বিধিসমূহ পার্বত্য চট্টগ্রাামে প্রযোজ্য হইবে৷